Bardhaman Anchal Charcha O Lokayata Sanskriti - Shyamsundar Bera
১২০৩ খ্রিস্টাব্দ বাংলার ইতিহাসে বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করে। বিহার জয় করার পর বখতিয়ার খলজি অতর্কিতে নদীয়া আক্রমণ করেন। অপ্রস্তুত লক্ষ্মণ সেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারায় পরাজয় ঘটে তাঁর। তিনি পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান এবং বখতিয়ার খলজি লক্ষ্মণাবতী বা গৌড় অধিকারের লক্ষ্যে যাত্রা করেন। বাংলায় সূচনা হয় মুসলমান শাসন। পারস্য ঐতিহাসিক মিনহাজ আল-সিরাজ-এর বিস্তৃত বিবরণে এটি পাওয়া যায়। সেইসময় বৌদ্ধ বিহার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসলীলা চলে এবং বৌদ্ধভিক্ষুদের নিপীড়ন ও বলা যায় গণহত্যা হয়। অতুল সুর তাঁর 'বাংলা ও বাঙালীর বিবর্তন'-এ মত প্রকাশ করেছেন-'বখতিয়ার খলজি একহাতে কোরান ও অপর হাতে অসি নিয়েই বাংলায় প্রবেশ করেছিল। সুতরাং গোড়া থেকেই আগন্তুক মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুর মন্দির ও প্রতিমা ভাঙার ও ধর্মান্তরকরণের এক উন্মাদনা ছিল।' বখতিয়ার খিলজির সময় থেকে পরবর্তী দুশো বছর বাংলায় বিপর্যয়ের তাণ্ডবলীলা চলে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। এই রীতির বদল ঘটে সুলতান ইলিয়াস শাহ (১৩৪২-৫৮)-র সময় থেকে। প্রথম পর্বের শাসনতন্ত্রে হিন্দুদের স্থান ছিল না। লুণ্ঠিতা, অত্যাচারিতা হিন্দু মহিলারা তাদের সমাজে স্থান পেত না। তারা মুসলমানদের বিয়ে করে বিবির সম্মানজনক স্থান পেতে থাকে। ইলিয়াস শাহর পর কয়েকজন সুলতান হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেন। গোঁড়া হিন্দুদের অত্যাচারেও দরিদ্র তথা নিম্নশ্রেণির অপাংক্তেয় হিন্দু সমাজের মানুষজনও পীর, ফকির, মুসলমান সাধুসন্তদের মহিমায় আকৃষ্ট হত। ধর্মান্তরিত হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষজন কিন্তু তাদের আগের জীবিকা বা জীবনচর্যার পরিবর্তন করত না। নানাভাবে হিন্দু-মুসলমানের মিশ্রণের ফলে হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের বিদ্বেষ, পারস্পরিক অবিশ্বাস কমতে থাকে ধীরে ধীরে। সুলতানরা হিন্দুদের রাজকার্যের উচ্চপদে নিয়োগ করতে থাকেন।
বর্ধমান অঞ্চল চর্চা ও লোকায়ত সংস্কৃতি
Bardhaman Anchal Charcha O Lokayata Sanskriti