Hindutter Hingsar Mukhe Nari - Brinda Karat
পাশ্চাত্যে নারীবাদী ভাবনাকাঠামো বরাবরই নারী-পুরুষের আন্ত:সম্পর্কে আটকে থেকেছে। ভারতে বর্ণপ্রথা-সহ রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নারী নির্যাতনের একাধিক রূপ এবং পদ্ধতি প্রত্যক্ষ আলোচনা করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী বাস্তুতন্ত্রের সাম্প্রদায়িক, বর্ণবাদী এবং মূলগতভাবে অগণতান্ত্রিক চরিত্র কীভাবে নারীর উপর যৌন নির্যাতনকে বৈধতা দেয়, তার বলিষ্ঠ পর্যালোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এই গ্রন্থে ভারতের অগ্রগণ্য একনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীদের একজন খতিয়ে দেখেছেন, হিন্দু দক্ষিণ পন তার প্রায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় উত্থানের পরের দশকটিতে কিভাবে নারীর নিরাপত্তা,মর্যাদা ও সুরক্ষা পদে পদে খর্ব হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আর.এস.এস), ভারতীয় জনতা পার্টি (বি.জে.পি) এবং সংঘ পরিবারের অন্যান্যদের পথপ্রদর্শক মতাদর্শ হিন্দুত্ব আদতে একটি সংখ্যা গরিষ্ঠবাদী, জঙ্গি এবং পশ্চাৎপথগামী চিন্তাধারা যার অনুপ্রেরণা বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক এবং নারীবিদ্বেষী নানা পাঠ্য তথা ভাবনা প্রবাহ। বৃন্দা কারাট লিখছেন, ভারতে নারী নির্যাতনের মামলায় অবিচারের ঘটনা নতুন না হলেও ২০১৪ সাল থেকে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক আধিপত্য এই অন্যায়ের প্রকৃতি ও ব্যাপ্তি দুইতেই পরিবর্তন এনেছে। কোন ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাধারী নেতাবৃন্দ ও তাদের সরকার পুলিশ এমন কি আদালতেরও মনোভাব কেমন হবে তা ক্রমশ আরো বেশি নির্ভর করছে আক্রান্ত এবং আক্রমণকারী ধর্মীয় পরিচয়ের উপর। তৈরি হচ্ছে নয়া ধর্ষণ সংস্কৃতি, যা আদতে সমস্ত নারীর ক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের প্রক্রিয়া গুলিতে থাবা বসাচ্ছে। বর্তমানকালের সবচেয়ে নৃশংস কয়েকটি নারীর বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠের হিংসার ঘটনা এবং তার সরকারি প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখছেন কারাট- বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি, ছোট্ট আসিফা বানানোর নির্যাতকদের পক্ষ নিয়ে প্রচার, হাসরথের ধর্ষিতার দেহ চুপিসারে সৎকার করে দেওয়া, মণিপুরে কুকী নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। তিনি দেখিয়েছেন ঠিক কিভাবে ও কখন যৌন হিংসাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া হয়, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়নি নিপীড়িত বর্ণ তথা ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু নারীদের। আশা করা যায় এই গ্রন্থটি দ্রুত পাঠক মহলে বিস্তার লাভ করবে।
হিন্দুত্বের হিংসার মুখে নারী
Hindutter Hingsar Mukhe Nari