প্রকৃতিপ্রেমিক যযাতি নিজে কবি হতে চাইলেও তার পিতা নহুষ তাকে তৈরি করেছিলেন বীর যোদ্ধা হিসাবে। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে যযাতি অশ্বমেধ যজ্ঞে যোগদান করে সারা আর্যাবর্ত জয় করেন।
নারী-আসক্তি জন্মায় যৌবনের প্রারম্ভে। কিন্তু সেই আসক্তি তার মনে গভীর ভাবে প্রবিষ্ট হয়নি। এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিকার-প্রেমী যযাতির সঙ্গে একদিন দেখা হয় দেবযানীর। এক গভীর কুয়োর মধ্যে থেকে যযাতি দেবযানীকে উদ্ধার করে। পরে সুন্দরী দেবযানীর প্রস্তাবে এবং দানবগুরু ঋষি শুক্রাচার্যের বৈভবে প্রভাবিত হয়ে যযাতি দেবযানীকে বিবাহ করে। দানবরাজ বৃষপর্বের কন্যা শর্মিষ্ঠা দেবযানীর বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও দেবযানী তার হিংসার প্রবৃত্তিতে শর্মিষ্ঠাকে দাসী হিসাবে হস্তিনাপুরে যযাতির রাজপ্রাসাদে নিয়ে যায়।
তার পর যযাতির জীবনে ঘনিয়ে আসে দুঃসময়ের বাতাবরণ। দেবযানীর প্রকৃত লোভ ছিল রাজসিংহাসনের প্রতি। হস্তিনাপুর রাজ্যের রাজত্ব পরিচালনা করা এবং এই অদম্য ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার জন্য যযাতিকে পরিকল্পিতভাবে সুরা এবং নারীর প্রতি আসক্ত করে তোলে দেবযানী। শুরু হয় যযাতির অধঃপতন। অন্যদিকে শর্মিষ্ঠার ভালবাসায় যযাতি অভিভূত হয়ে তার সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এর পরের ইতিহাস খুবই দুঃখজনক। দেবযানী, শর্মিষ্ঠা ও তার সন্তান পুরুকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলে যযাতি তার বন্ধুর সাহায্যে শর্মিষ্ঠাকে হস্তিনাপুর থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়।
এই ঘটনার প্রায় আঠারো বছর পর শর্মিষ্ঠার সঙ্গে দেখা হয় যযাতির, যখন পুরু দেবযানীর পুত্র যদুকে যুদ্ধবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে হস্তিনাপুরে নিয়ে আসে। সেই সময় থেকে শর্মিষ্ঠার চেষ্টায় যযাতির চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে। কামাসক্ত অবস্থা থেকে যযাতি পরিবর্তিত হয় আত্মজ্ঞানলাভের সাধক হিসাবে। এরপর পুরুকে রাজসিংহাসনে প্রতিষ্ঠা করে যযাতি ঋষি কচের সঙ্গে চলে যায় ভৃগুপর্বতে, গভীর ভাবে সাধনায় মগ্ন থাকার জন্য। সঙ্গে যায় তার চিরশত্রু দেবযানী, যে ততদিনে নিজেকে পরিবর্তিত করেছে পরিবেশের চাপে।
এই উপাখ্যান প্রেম, কাম, ভোগ, ত্যাগ, চরম বৈরাগ্য ও মুগ্ধ ভালোবাসার কাহিনি।
যযাতি : হস্তিনাপুর থেকে ভৃগুপর্বত
Jajati : Hastinapur Theke Bhriguparbat
Jajati : Hastinapur Theke Bhriguparbat - Dilip Datta
দিলীপ দত্ত

















