প্রয়াত হবার অব্যবহিত পরে ঋত্বিককে স্মরণ করে সত্যজিৎ বলেছিলেন, "ঋত্বিক আমার চেয়েও বেশি বাঙ্গালী ছিল।" কিন্তু ঋত্বিক বাঙ্গালী, প্রশ্ন কোন বাঙ্গালী-ঋত্বিক?
প্রশ্নটার মূলে যাবার আগে যেসব দৃশ্য আর শব্দকে আশ্রয় করে ঋত্বিকের ছবির পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে তার দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাই।
ক্যালেণ্ডার-নীল সমুদ্রে ভাসমান একটি জাহাজের ছবি-বেকার যুবক রামু, তার চোখে তাই হয়ে ওঠে শহর-গলির বাইরে, বড় কোনো জগতের ইশারা-নাগরিক। ভাঙ্গা ঝরঝরে মোটর গাড়ী, তার উপরে মনুষ্য-সত্তারোপ করে বসে খ্যাপা ড্রাইভার বিমল, খানিকটা আদিবাসীদের মতো-অযান্ত্রিক। কলকাতা শহরের রুক্ষ নিষ্করুণ পরিবেশের কিছু অভিজ্ঞতা পুঁজি করে কাঞ্চন ফিরে যায় আবারও তার শ্যামল সবুজ গ্রামের দিকে-বাড়ী থেকে পালিয়ে। ছেলে আর মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে, প্রকৃতির সান্নিধ্য স্বাদ নিতে বের হয় এক প্রৌঢ় স্কুল শিক্ষক। নবান্ধুর ধান, সবুজ মাঠ, নীল আকাশ-তার দিকে তাকিয়ে বলে কী যেন একটা আছে, বিষমভাবেই আছে- মেঘে ঢাকা তারা। ঘন-ছায়া আকাশের কোল ঘেঁষা নদনদী, হইহই করে বইঠা হাঁকিয়ে আসে নৌকা-মাঝি-গলুইয়ের কাছে দাঁড়িয়ে উদ্দাম দোহার দেয় নাটক-পাগল একগুচ্ছ মানুষ-কোমল গান্ধার। বাতাসে কাঁপন ধরা সবুজ ধানক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে মায়ের মুখে শোনা ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়া গানটি গেয়ে ওঠে মা-বাবা হারা এক অনাথ শিশু, বিনু-সুবর্ণরেখা। ভাঙ্গা বুদ্ধিজীবী নীলকণ্ঠ বাগচী, রাত কাটাতে যাওয়া শাল শিশুবনের গভীরে-যুক্তি তত্ত্ব ও গল্পো। তিতাসের কোলে মালোপাড়ার যুবতী মেয়ে বাসন্তী-নদীটা মরছে কিন্তু নামটা রয়্যা গেল জেনেও-মৃত্যুর সদ্যপূর্বমুহূর্তে সেই তিতাসেরই শুকনো বালি খুঁড়ে এক গণ্ডুষ জলের সন্ধানে ব্যর্থ হয়। তারপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে---তিতাস একটি নদীর নাম। এই সব দৃশ্য, শব্দময়, ঋত্বিকের ছবির জগৎ।
প্রসঙ্গ ঋত্বিককুমার ঘটক : চলচিত্র সমালোচনা
সম্পাদক : বিভাস মুখোপাধ্যায়
প্রকাশনা : দে বুক স্টোর
ধারা : প্রবন্ধ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩৪৪
বাধাই : পেপারব্যাক
top of page
₹480.00 Regular Price
₹430.00Sale Price
Related Products
bottom of page