এই বইটি মূলতঃ সাহিত্য-সম্পর্কিত কিছু প্রবন্ধের সংকলন। পৃথিবীর যত আলো, চোখের আলো ফুরিয়ে আসছে এটা বুঝতে পেরেও যে মানুষেরা জেদ ধরে লিখে গিয়েছেন প্রদীপের কাঁপতে থাকা শিখার দিকে দৃষ্টিপাত না করে, তাঁদের জেদের কথা স্মরণ করে কিছু অনুভূতিকে সহজভাবে বুঝে ওঠার চেষ্টা।
প্রথম দুটি লেখা বাংলা সাহিত্যের মূলধারার স্রোতের বিরুদ্ধে সারাজীবন সাঁতার কেটে চলা দুই ভিন্ন ধারার লেখক, নবারুণ ভট্টাচার্য্য ও রাঘব বন্দোপাধ্যায়কে স্মরণ করে লেখা। ওঁদের সাহিত্যিক অবদান বিচার করার আস্পর্ধা আমার নেই। শুধু ওঁরা চলে যাওয়ার এতদিন পরে আরও বেশি-বেশি করে মনে হচ্ছে যে, জগতকে দেখা-বোঝার ক্ষেত্রে দুজনের অবস্থানে বিস্তর ফারাক থাকলেও, কমিটমেন্টের ক্ষেত্রে একটা নিবিড় যোগসূত্রও হয়ত আছে। দুজনেই হৃদয় দিয়ে চারপাশটাকে দেখা ও লেখার চেষ্টা করে গিয়েছেন সারাজীবন। সামাজিক অসুখ ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা আর প্রতিষ্ঠান-নির্ভর ফিইল-গুড সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রত্যাখান করেছেন, সাহিত্যের বাজারে জনপ্রিয় 'রিফাইন্ড মিডিওক্রিটি' অস্বীকার করে দাপটে বেঁচেছেন। শারীরিক ব্যাধির সঙ্গে লড়তে-লড়তে লিখে গিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত বুক চিতিয়ে লড়েছেন, মাথা নোয়াননি। ওঁদের মৃত্যুর কিছু পরে এই দুটি লেখা, দুটি ছোট পত্রিকার উদ্যোগে প্রকাশ পায়। বছর-দশকের দীর্ঘ সময়কাল পার করে, বিস্মরণ, আপোস, ও সাংকেতিক 'স্টেটাস' ও 'লাইক'-নির্দেশিত আত্মবিজ্ঞপ্তির এক বিদঘুটে নতুন কালচারাল লিটেরেসির সমকালে, এই দুজনের লেখায় নতুন করে ফেরার দায়িত্ব প্রত্যেক শিক্ষিত বাঙালি পাঠকের ওপর বর্তায়, এমনটাই আরেকবার বলার চেষ্টা করেছি।
পরের চারটে লেখা এক অর্থে বইপড়ার ব্যক্তিগত অথবা সামাজিক স্মৃতিচারণ। যেহেতু মানুষের মৃত্যুর পরেই একমাত্র তাঁদের প্রকৃত 'মূল্য' বুঝতে শিখি আমরা; প্রবাহী আধুনিকতার স্রোতে ভাসতে ভাসতে কখনও তাঁদের রেখে যাওয়া বই আর জাগতিক বস্তুসমূহকে আঁকড়ে ধরি, কখনও মনে-মনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বুঝতে পারি, কথা বলে চলেছি অন্ধকারে, একতরফা। "The tradition of all dead generations weighs like a nightmare on the brains of the living"-কে যেন বলেছিলেন কথাটা?
শেষের লেখাটির সন্ধান শুধু একটু আলাদা, যদিও এর শিরোনামটা এই সংকলনের সকল লেখাকে এক সূত্রে বাঁধে, এমনটাই মনে করেছি। এই লেখাটি আপাতভাবে ধূমপানের সাংস্কৃতিক ইতিহাস-বিষয়ক, কতটা সাহিত্য কিংবা সাংস্কৃতিক স্মৃতিলোপ-বিষয়ক সেটা পাঠক বিচার করবেন। পাণ্ডুলিপিরা পোড়ে না ঠিকই-তবে কাগজ পোড়ে, মানবদেহ পোড়ে। কখনও মৃত্যুর বহু আগেই মানুষের স্মৃতিলোপ সম্পূর্ণ হয়। "একে একে শুখাইছে ফুল এবে, নিবিছে দেউটি”-সে তো শুধু আজকের ঘটনা নয়।
কাগজের ওপর কালির আঁচড়, হরফের স্মৃতিচিহ্ন-এদের স্থায়িত্ব শুধু মনে। প্রাচীন ভারতবর্ষের নিরীশ্বরবাদীরা যেমন মনে করতেন, আসলে কোনওকিছুই স্থায়ী নয় এই ভূমণ্ডলে। অক্ষরের সাধ্য আর কতটুকু? এই মুহূর্তে আর কিছু তো বলার নেই এছাড়া।
পুড়ে যেতে হবে জেনো তাই
লেখক : দীপ্তনীল রায়
প্রকাশনা : তৃতীয় পরিসর
ধারা : প্রবন্ধ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২০০
বাধাই : হার্ডকভার
top of page
₹450.00 Regular Price
₹400.00Sale Price
Related Products
bottom of page

















