top of page

সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে মুদ্রা বা বিনিময় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। প্রাথমিকভাবে পণ্য বিনিময় পদ্ধতিতে দেওয়া-নেওয়া হলেও নানারকম বিভ্রান্তির কারণে মুদ্রা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল বলে ধারণা করা যায়। সেজন্যে বিভিন্ন সময় ও নানা রাজত্বের নানারকম পরিস্থিতির অর্থনৈতিক ইতিহাস মুদ্রাকে অনুসরণ করলে অনেকাংশে বুঝতে পারা যায়।

     হরপ্পা সভ্যতায় মুদ্রার ব্যবহার না দেখা গেলেও বৈদিক যুগ থেকে স্বর্ণমুদ্রার (নিষ্ক ও মনা) উল্লেখ মেলে। লিডিয়ান বা চিনা মুদ্রার সঙ্গে প্রাচীন ভারতের মুদ্রাও পাওয়া যায়। খ্রিঃ-পূঃ ষষ্ঠ শতকে যোড়শ মহাজনপদের নানা মুদ্রার উল্লেখ মিলেছে। যদিও বলা যায়, সুসংহত মুদ্রা ব্যবস্থা মৌর্য রাজাদের সময় থেকেই এসেছিল। আলেকজান্ডারের আগমন ও পরবর্তীতে গ্রিক, কুষাণ বা শক রাজাদের মুদ্রায় গ্রিক প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।

     গুপ্তরাজাদের স্বর্ণমুদ্রা দেখে সোনার সময় বা পরবর্তীর অবক্ষয় এবং মাৎস্যন্যায়ের ধারণা করা যেতে পারে। দক্ষিণ ভারতের রাজাদের ঐশ্বর্যের খোঁজ পাওয়া যায় তাদের মুদ্রার আকার, প্রকৃতি দেখে। পাল ও সেন যুগে সেই অর্থে মুদ্রা না থাকায় বোঝা যায়, সোনা-রুপোর জোগান কমে গিয়েছিল অনেকাংশে। বরং কড়ির প্রচলন হয়েছিল খুচরো কেনা-বেচার জন্যে, এবং তা চলেছিল বহুকাল। 'টাকাকড়ি' কথাটা সেই থেকেই চলে আসছে।

     মুসলিম আমলে স্বাভাবিকভাবে ইসলামের প্রভাব পড়েছিল সুলতানদের চালু করা মুদ্রায়। আরবি ধারার এসব মুদ্রা কোনও কোনও ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির পরিচয় দেয়। সে-সময়ের 'তঙ্কাও' বা পরবর্তীর 'রূপেয়া' এখনও মুখের ভাষায় আমরা অনেকাংশে ব্যবহৃত হতে দেখি।

     মোঘলদের অবক্ষয় ও ইংরেজদের ক্ষমতা হস্তান্তরের ইতিহাস, এমনকী নবাব সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ এবং যুদ্ধের একটি শর্ত হিসেবে ইংরেজদের নিজস্ব মুদ্রা তৈরির কথাও জানা যায়। যদিও ইংরেজরা বক্সারের যুদ্ধের পর সে-অধিকার লাভ করে, প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে কারেন্সি চলত। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের পর ভারত সরাসরি ইংরেজ রাজার অধীনে যাওয়ার পর রাজা ও রানির ছবি দেখা যায় ভারতের মুদ্রা ও নোটে।

     স্বাধীন দেশে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম নোট ছাপার পরেও খুচরো হিসেবে ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা চলত। সে ব্যবহার ছয়ের দশক থেকে বন্ধ করা হয়। ততদিনে বন্ধ করা হয়েছে আনা পয়সার হিসাব, বদলে চালু হয়েছে দশমিক প্রথা, যা আজও চলছে। যদিও কিছু মুদ্রা বা নোটের যোগ-বিয়োগ হয়েছে এবং ধরে নেওয়া যায় ভবিষ্যতেও হবে। সেই নিয়মমতোই সাম্প্রতিককালের নোটবন্দির ব্যবস্থাও আমরা দেখেছি।

     উপমহাদেশের আড়াই হাজার বছরের এই দীর্ঘ অর্থনৈতিক ইতিহাস স্বল্প পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল। সাধারণ পাঠকের এ সংক্রান্ত কিছু আগ্রহ তৈরি হলে যাবতীয় উঞ্জুবৃত্তি সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

 


উপমহাদেশের মুদ্রা : আড়াই হাজার বছর

লেখক : বৈদূর্য্য সরকার

প্রকাশনা : দে বুক স্টোর

ধারা : প্রবন্ধ

পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১০৯

বাধাই : হার্ডকভার

Upamahadesher Mudra : Arai Hajar Bochor - Baiduryya Sarkar

₹300.00 Regular Price
₹255.00Sale Price
Quantity

    Related Products

    bottom of page