top of page

'ওম্' যখন 'গুরুমেব': এক মিশ্র কথন - উৎস রায় চৌধুরী

  • Utsa Roy Chowdhury
  • Aug 3
  • 3 min read

'ওম্' যখন 'গুরুমেব': এক মিশ্র কথন - উৎস রায় চৌধুরী

একটি তত্ত্ব বা উপলব্ধি এক নয়। যেকোনো উপাসনাই যখন মগ্নতা তখন তার ভেতর ওম্ উপলব্ধ হয়। এই ওম্ নিস্তব্ধতা এবং নিজেকে খুঁজে পাবার জার্নি। অল্প অল্প করে শিল্পকে অধিবাস করে বা জানাকে পরম করে মানুষ এমন এক জায়গায় উঠে যায় সেখানে সে আর বিশৃঙ্খল নয় বরং একটি স্থির সত্তা। তবলা যদি একটি ভগবতীয় উপঢৌকন হয় তবে তার বাঁয়াতে রয়েছে ওম্ ধ্বনি এবং দক্ষিন বাদ্য বা তবলায় রয়েছে তরঙ্। এই দুটো মিলে যে সংরাগ তৈরী হয় তা আমাদের চেষ্টায় বোধন পেতে পেতে একটি মানস স্তম্ভ তৈরী করে। তখন আমরা শিল্পী হই। আমি যদি আমাকে ভাবি, আমিত্ব ত্যাগ করেই ভাবি তবে আমি শিল্পের দর্শক মাত্র, তাকে ছুঁতে চেষ্টা করে এসেছি নিজস্ব ভুল ত্রুটি নিয়ে কিন্তু যাঁরা আয়ত্ব করেছেন তাঁরা বশীকরণ মন্ত্র উচ্চারণ করেন এবং প্রিয় ও সাহসের মিশ্রনে শিল্পীতে পরিণত হন। তাঁদের একটি নিজস্ব ক্ষেত্র তৈরী হয়।  কিন্তু 'গুরু' এবং সেই 'ওম্'-কে যদি মিলিয়ে দেওয়া হয় তবে তা একপ্রকার উত্তরনের চাইতেও অতিক্রম বললে ঠিক বলা হয় বোধহয়।

        ধীরে ধীরে বিন্দু বিন্দু চর্চা বোধ শিরা বা ধমনীর গীতা ধর্মের জাগৃতিকে ফোটায়। গান বা বাদ্যকে সময়ের অংশীদার হয়তো ভাবা ঠিক নয়, বরং এটাকে আত্মীকরনের মূল মন্ত্রে স্থাপন করা উচিৎ।  আমি এসব বলছি মানে শিল্পী বা বাদ্যকার নই তবে আমি উপলব্ধি করেছি। তাই আমার মনে হয়েছে আত্মীকরন শিল্পীকে গড়লেও 'ওম' এর সর্বংসহা চূঁড়ার ওপরে আর কিছুকে না দেখা এবং জানাকে মন্থন করতে করতে তা যখন ব্যক্তির উদ্ভাবকে পরিণত করে তখন সে গুরুতে পরিণত হয়। এটা অনস্বীকার্য যে সৃষ্টি এবং গাম্ভীর্যের পরম্পরাকে ধারন ও বাহনে মেশালে 'গুরু'তে পরিণত হয়। আবার একই রকম ভাবে ‘ওম্’ ধ্বনি যেটি রয়েছে তার মধ্যে সৃষ্টি স্থিতি লয়ের তাৎপর্য এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর মাত্রাধিক স্তর থাকে। কাজেই ওম্ উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের ধী ও কল্পনা পরম ব্রক্ষ্মকে উপলব্ধি করে এবং এই উপলব্ধিকরনের একটি অনড় কান্তি হল 'ওম্'। 'গুরু'ও তেমনি তাঁর ধী ও তাঁর নিজস্ব প্রাপ্তির পরম দিয়ে কান্তিময় শিল্পীকে তৈরী করেন।

        'ওম' উচ্চারনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ বেগে নিজের গ্লানির সংস্কার হয়। 'ওম' এমন একটি শব্দ যার প্রতিটি কোণ নিজের আত্মার সাথে সুবোধের অধ্যাত্মের সাথে যোগ তৈরী করে। 'ওম্' ছাড়া পরম লাভ হয় না বলে সবসময় এটাই মনে হয় যে আত্ম বিনষ্ট হচ্ছি। তাই ধ্যান ও ওম্ একটি অবিচ্ছেদ্য মাধ্যম যার শপথ বাক্যই হল ওংকার। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন " ওঁম্‌ হইতে ওঁম্‌ শিব, ওঁম্‌ কালী, ওঁম্‌ কৃষ্ণ হইয়াছেন"। ঠিক একইভাবে যেহেতু আমাদের শিল্পের মাধ্যম তবলা, তাতে প্রতিটি বোল এবং তাল ও লয়কার যদি মন্ত্র হয় তবে  'গুরু'র দ্বারা তা এক অতি সংবেদনশীলতা পায়। এই অতি সংবেদনশীলতাই শিষ্যকে নিঃস্বার্থ শৈল্পিক আবেগে পরিপূর্ণ করে। তাই 'গুরু'র কাছে যাওয়া মানেই গুরু প্রাপ্তি হল না, যদি 'গুরু'র নিজস্ব উপমায় স্নান করা যায় তাঁর কাছে তবে 'গুরু'র চেতনে আত্মচেতন মিলে যায় এবং তখন 'গুরু'র বোধি নিজস্ব বোধিতে পরিণত হবার একটি আলাপ তৈরী হয়,  তখনই 'ওম্' ও 'গুরু' একাত্ম হন এবং "ওঁম্‌ গুরুমেব" হয়ে ওঠেন।

        সেই অর্থে বড় গুরুজী পন্ডিত স্বপন চৌধুরী এক অনবদ্য লব্ধকার। তাঁর প্রবাহতে নিজের তবলা সংস্কারের এক 'রাগ'  তৈরী হয়। এই সম্ভাবনায় আমার নির্বেদ সত্তাও বলে দিচ্ছে তাঁর 'গুরুত্বে' ওম্ আছে। সমস্ত সংসারময় বিয়োগ যখন 'ওম্' ধ্বনিতে অবলুপ্ত হয়,  ঠিক একই ভাবে পন্ডিত স্বপন চৌধুরী এক সন্নিবেশ ও প্রতিষ্ঠান। তাঁর আলোর মহতি রূপ হল 'ওম্'।  এই ওম্ সহস্রময় শিক্ষার বেড়াজালকে ছিন্ন করে।  আমার সময়াভাব ও মানসিক বিচ্যুতিও তাঁকে অনুধাবন করেছে তাঁর 'ওম্' পর্যায়ে। এই পর্যায় থেকেই তবলার জীবনি মন্ত্র তৈরী হয়। একটা নিস্তরংগ দিক তরঙ্গের দিকে ছুটে যায়।  তখন মনে হয় 'গুরু'ই সব। নিজেকে প্রতীয়মান করার জন্য চাই 'গুরু'কে ভাবার শ্রেষ্ঠ পথ। এখানেই 'ওম্' ও 'গুরু' এক নিটল মহীয়ান তত্ত্ব যা মিলিয়ে দেয় তন্ত্র যোগে। এখানে শিল্পের গরিমা ধ্যান গরিমায় লিখিত হয়। বড় হয়ে ওঠে নিরহংকার।

1 commentaire

Noté 0 étoile sur 5.
Pas encore de note

Ajouter une note
Arkoprabho Dasgupta
Arkoprabho Dasgupta
08 août
Noté 5 étoiles sur 5.

খুব সুন্দর ও গভীর লেখা

Modifié
J'aime
bottom of page